Bengali Love Poems Collection Bangla Premer Kobita বাংলা প্রেমের কবিতা

Bengali Love Poems Collection Bangla Premer Kobita

Bengali Love Poems Collection Bangla Premer Kobita

প্রেমের কবিতা বা ভালোবাসার কবিতা পড়তে আমরা সকলেই ভালোবাসি তাই আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম বাছাই করা কিছু রোম্যান্টিক প্রেমের কবিতা আশাকরি আপনাদের সকলের ভালোলাগবে।

 

>> বাংলা প্রেমের কবিতা <<

 

আমি একটা তুই চাই

– শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

 

আমি একটা তুই চাই

একটা সত্যিকারের তুই চাই,

যে জানবে আমার পুরো ভিতরটা

জানবে আমার লুকানো সব দোষ,

আমার বদমাইশি, আমার নোংরামি,

আমার কলঙ্ক।

যে নিজে থেকে আমার ভুলগুলোর

অংশীদার হবে,

আমার পাপগুলোকে অর্ধেক করে লিখে নেবে

নিজের খাতার প্রথম পাতায়।

 

আমি এমন একটি তুই চাই

যাকে আমি নির্দ্বিধায় উপহার দেব

আমার সব অনিয়ম,আমার অপারগতা,

আমার বদভ্যাস, আমার উশৃঙ্খলতা।

আমি পিঠ চাপড়ে তার

কাঁধে তুলে দেব আমার

অসহায়ত্বের ঝুলি,

আমার একাকীত্ব, আমার নিঃসঙ্গতার কষ্ট,

আমার দুশ্চিন্তা, আমার হতাশা।

 

সবগুলো ঝাড়ুদারের মতো কুড়িয়ে নিয়ে

সে বাধবে মস্ত বড় এক বস্তা,

তারপর কুলির মতো

মাথায় করে বয়ে নিয়ে যাবে সেইসব অভিশাপ,

আর হাসতে হাসতে বলবে –

ভীষণ ভারী রে, কি করে এতদিন বইলি

এই বোঝা?

তারপর,

ঠিকানা ছাড়া পথে হাটতে থাকবে অসীম

সমুদ্র পর্যন্ত

সাগর পাড়ে এসে

প্রচন্ড শক্তিতে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সেই বোঝা

ঠিক সাগরের মাঝখানে হারিয়ে যাবে

আমার সব অভিশাপের ঝুলি।

 

আমি ঠিক এরকম একটা তুই চাই

যে কোনদিন তুমি বা আপনি গুলোর মাঝে

হারিয়ে যাবে না

প্রেম এল না

 – কবিতা সিংহ

 

বুকের ভেতর প্রেম এলোনা

প্রেমের জন্য দুঃখ এলো।

বৃক্ষ দিলে, পত্র দিলে

শাখায় শাখায় পুষ্প দিলে

পুষ্পে পুষ্পে মধুর ছিটে বোঁটায়

আসল ফল এলোনা।

 

ফল এলোনা, ফল এলোনা

ফলের জন্য দুঃখ এলো।

বুকের ভেতর প্রেম এলোনা

প্রেমের জন্য দুঃখ এলো।

বৃথায় তবে শরীর দিলে

শরীর জুড়ে আত্মা দিলে

বয়সকালের ইন্দ্রজালে

দেহের ভিতর বংশবৃদ্ধি

দেহের যত অন্ধি-সন্ধি

ঘুরে মরলাম, মাথা কুটলাম।

 

শরীর নিয়ে দুঃখ এলো

বুকের মধ্যে প্রেম এলোনা,

প্রেম এলোনা, দুঃখ এলো

প্রেম যে কেমন জানার জন্য, দুঃখ এলো

সব পেয়ে যা পাওয়া হলোনা

তারই জন্য কষ্ট হলো,

প্রেমের জন্য কষ্ট হলো।

 

প্রেম যে কেমন

কামড়ে দেখার ছুঁয়ে দেখার ছেনে দেখার

বুকে পেষার জন্য, বড়ো কষ্ট হলো।

প্রেমের জন্য বুকের মধ্যে কষ্ট হয়ে

প্রেম কি হলো?

বুকের ভেতর প্রেম এলোনা,

প্রেম এলোনা, দুঃখ এলো।

 

আরও পড়ুন>> Best Ever New Bangla Motivational Quotes

 

মানুষ বড় অভিমানী

– সাদাত হোসাইন

 

মানুষ বড় অভিমানী প্রাণী

সে চায়, তার মন খারাপ হলে প্রিয় মানুষটাকে না

বললেও সে বুঝে ফেলুক। ফোন করে খানিক

ম্লান গলায় ‘হ্যালো’ বলতেই ওপারের মানুষটা বলুক,

‘তোমার মন খারাপ?’

 

তার এলোমেলো চুল, খানিকটা লাল চোখ দেখে

বলুক, ‘তোমার ঘুম হয় নি রাতে? দুঃস্বপ্ন দেখছ?

টেনশন করছ কিছু নিয়ে?’

 

সে চায়, মানুষটা বুঝুক, কখন শক্ত করে বুকের

সাথে চেপে ধরতে হয়, চোখের সামনে

আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বন্ধ করে দিতে হয়

চোখের পাতা।

 

সে চায়, মানুষটা বুঝুক, কখন হাতের মুঠোয় হাত

রাখতে হায়, ফিসফিসিয়ে বলতে হয়, ‘আমিতো

আছিই। তবে? মন খারাপ কেন?’

 

সে চায়, মাঝরাত্তিরে সে টের পাক, পাশের মানুষটা

তার মাথার নিচের সরে যাওয়া বালিশটা ঠিক করে

দিচ্ছে। শেষ রাতে যখন খানিক হিম নামে, তখন

জড়িয়ে দিচ্ছে ওম চাদরে।

 

সে চায়, মানুষটা মনে রাখুক তার জন্মদিনের কথা,

প্রথম দিনের কথা, স্পর্শ ও অনুভূতির কথা।

 

সে চায়, তাকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে কেউ

মিথ্যে মিথ্যে অজুহাত বানাক। কেউ কপাল ছুঁয়ে বলুক,

‘দেখি, দেখি, তোমার জ্বর নয় তো?

 

অভিমানে দূরে সরে যেতে চাইতেই কেউ

বলুক, ‘খানিক ভুল করেছি বলেই দূরে সরে

যেতে হবে? তবে এই যে এতো ভালোবাসি,

তাতে আরও কাছে আসা যায় না? আরও আরও কাছে?

অনেক অনেক কাছে?’

 

মানুষ বড় অভিমানী প্রাণী

তারা দুজনই কেবল ভাবে, এসবই ওই মানুষটা করুক।

ওই অন্য মানুষটা।

 

কিন্তু শেষমেশ করা হয় না কারোই। তাই কাছে

আসার রঙ্গিন দিনেরা ক্রমাগত দূরে যাওয়ার ধূসর,

বিবর্ণ গল্প হয়।

 

মানুষ বড্ড অভিমানী প্রাণী

অভিমানে সে ক্রমশই দূরে চলে যায়।

বুকে পুষে রাখে এক সমুদ্র আক্ষেপ।

জানো

– শুভ দাশগুপ্ত

জানো,

একদিন জিলিপি খাওয়ার দুরন্ত লোভে

বেদম মার খেয়েছিলাম কাকিমার হাতে

অকালে বাপ – মা মরা

সেই আমার অবুঝ ছেলে বেলায়? জানো?

চাঁদা দিতে পারিনি বলে কতবার আমাকে নেয়নি

পাড়ার ছেলেরা ওদের হৈ হৈ পিকনিকে?

জানো।

বুকের নদীতে যার জন্য ঢেউ জেগেছিল দুরন্ত একুশে

বাইশ আসার আগেই

বুদ্ধিমতির মত হরিণ চোখে সে গেঁথে নিয়েছিল

এক অন্য পুরুষ !

অথচ জানো –

সে সবুজ ভালোবাসতো বলে আমি

ঘাসের উপর সন্তর্পনে হাটতাম

সে নীল দেখতে চাইতো বলে

মেঘ করলেই আমি অস্থির হয়ে পড়তাম

সে লাল পছন্দ করত বলে

করণে অকারণে নিজেকে রক্তাক্ত করে তুলতাম!

এবং জানো –

শিশুকাল থেকে আমি কেবল পুড়েছি।

জিলিপির আমোঘ লোভে

সবান্ধব হুল্লোড়ের অনিবার্য ইচ্ছায়

যৌবনের বাসন্তী আগুনে

আমি পুড়তে পুড়তে

কয়লার মত নিরেট নিকষ কালো হয়েগেছি

তবু জানো?

আমায় চিনতেই পারেনি আমার সময়

আমার জীবন

আমার জন্ম!

 

মনে থাকবে?

– আরণ্যক বসু

 

পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক

আমরা তখন প্রেমে পড়বো

মনে থাকবে?

 

বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে

শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;

সন্ধে হলে বসবো দু’জন।

একটা দুটো খসবে তারা

হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে,

কান্ত কবির গান গাইবে

তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…

মনে থাকবে?

 

এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব

এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন

এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন

মনে থাকবে?

 

আমি হবো উড়নচন্ডী

এবং খানিক উস্কোখুস্কো

এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব

তুমি কাঁদলে গভীর সুখে

এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব

মনে থাকবে?

পরের জন্মে কবি হবো

তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।

তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে

নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে

গান বানিয়ে-

মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো…

মনে থাকবে?

 

আর যা কিছু হই বা না হই

পরের জন্মে তিতাস হবো

দোল মঞ্চের আবীর হবো

শিউলিতলার দুর্বো হবো

শরৎকালের আকাশ দেখার-

অনন্তনীল সকাল হবো;

এসব কিছু হই বা না হই

তোমার প্রথম পুরুষ হবো

মনে থাকবে?

 

পরের জন্মে তুমিও হবে

নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা

গায়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে

তৃপ্ত আমার অবগাহন।

সারা শরীর ভ’রে তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।

তোমার জলধারা আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।

আমার অনেক কথা ছিল

এ জন্মে তা যায়না বলা

বুকে অনেক শব্দ ছিল-

সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক

কাব্য করে বলা গেল না!

এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে

পরের জন্মে মানুষ হবো

তোমার ভালোবাসা পেলে

মানুষ হবোই- মিলিয়ে নিও!

 

পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…

বলতে ভীষণ লজ্জা করছে

ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে

পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…

মনে থাকবে?

 

আরও পড়ুন>> 50+ Awsome Bangla Shayari in bengali font

চিঠি দিও কবিতা

– মহাদেব সাহা

 

করুণা করেও হলে চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও

আঙুলের মিহিন সেলাই

ভুল বানানেও লিখাে প্রিয়, বেশী হলে কেটে ফেলাে তাও,

এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তােমার শাড়ির মতাে

অক্ষরের পাড় বােনা একখানি চিঠি।

চুলের মতােন কোনাে চিহ্ন দিও বিস্ময় বােঝাতে যদি চাও

সমুদ্র বােঝাতে চাও, মেঘ চাও, ফুল পাখি, সবুজ পাহাড়

বর্ণনা আলস্য লাগে তােমার চোখের মতাে চিহ্ন কিছু দিও।

আজোতো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি

আসবেন অচেনা রাজার লােক

তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌছে দেবে।

এক কোণে শীতের শিবির দিও এক ফোঁটা, সেন্টের শিশির চেয়ে

তৃণমূল থেকে তােলা ঘ্রাণ

এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখাে, তােমার কুশল ।

ওইতাে রাজার লােক যায় ক্যাম্বিসের জুতাে পায়ে, কাঁধে ব্যাগ,

হাতে কাগজের একগুচ্ছ সীজন ফ্লাওয়ার

কারাে কৃষ্ণচূড়া, কারাে উদাসীন উইলাের ঝোপ, কারাে নিবিড় বকুল

এর কিছুই আমার নয় আমি অকারণ।

হাওয়ায় চিৎকার তুলে বলি, আমার কি কোনাে কিছু নাই?

করুণা করেও হলে চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি দিও খামে

কিছুই লেখার নেই তবু লিখে একটি পাখির শিস

একটি ফুলের ছােটো নাম,

টুকিটাকি হয়তাে হারিয়ে গেছে কিছু হয়তাে পাওনি খুঁজে

সেইসব চুপচাপ কোনাে দুপুরবেলার গল্প

খুব মেঘ করে এলে কখনাে কখনাে বড়াে একা লাগে, তাই লিখাে

করুণা করেও হলে চিঠি দিও, মিথ্যা করেও হলে বলাে, ভালােবাসি।

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *